বাংলার আয়না

২ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৯ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২২ শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

Ad

সুইটের সীতাকুণ্ড ভ্রমণ

ইদ্রিস মাদ্রাজী
ভ্রমণ পিপাসু যারা এখনো সীতাকুণ্ড যান নি তাদেরকে বলছি। সীতাকুণ্ডে যাওয়ার মতো দুটি স্থান রয়েছে। একটা ইকো পার্ক আরেকটা চন্দ্রনাথ মন্দির। ইকো পার্কে রয়েছে সহস্র ধারা এবং সুপ্তধারা নামে দুটি ঝরনা। আর চন্দ্রনাথ মন্দির দেখতে হলে প্রায় ১২০০+ ফুট ওপরে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় যেতে হবে।

সুইট ইকো পার্কে যাবে প্রথমে? তাই তার মুখেই শুনি কেমন করে ঘুরে এলো সে পার্ক ও মন্দির। সুইট বললো, ভোর ৭টায় চট্টগ্রামের একেখান থেকে বাসে উঠলাম। যেতে যেতে আধা ঘণ্টা লাগল। ৩০ টাকা দিয়ে ইকো পার্কের গেটের সামনে বাস থেকে নামলাম। বাস থেকে নেমেই একটা রেস্টুরেন্ট নাস্তা করলাম। পার্কে প্রবেশ করলাম।

প্রথমেই আমাদের যেতে হবে সুপ্তধারা ঝরনায়। এ ঝরনাতে যেতে একটু কষ্ট করতে হয়, সেটা হলো গিরিপথে প্রায় ১০ মিনিট হাঁটতে হয়। ঝরনাটা গভীর নির্জনে তাই একা যাওয়া একটু রিস্ক তবে ৪-৫ জন গেলে কোনো সমস্যা নেই যদি কখনো এক-দুজন যান তাহলে ছিনতাইয়ের আশঙ্কা থাকে তাই অন্য কোনো দলের সঙ্গে মিলেমিশে যাওয়াই উত্তম। আমরাও কয়েকটি দল মিলে মিশে গিয়েছিলাম। কঠিন পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এক সময় সুপ্তধারা ঝরনাটা দেখতে পাই। স্থানীয়রা এটাকে ছোট ঝরনা বলে। কিন্তু এত বড় একটা ঝরনাকে কেন ছোট ঝরনা বলে তা অবশ্য এখনো আমার অজানা থেকে গেছে। অনেকবার সেটা জানতে চেয়েও জানতে পারিনি। বের করতে পারিনি মূল রহস্য। যাই হোক ঝরনাটা দেখেই মন প্রশান্তিতে ভরে গেল। একসঙ্গে তিনটা ঝরনা এর আগে কোথাও দেখিনি। আর ঝরনার দৃশ্যটা আমায় এখনো মুগ্ধ করে। এমন সুন্দর ঝরনা আমি আগে কখনো দেখিনি।

ঝরনার ডান সাইডের পাহাড় বেয়ে বেয়ে উঠে গেলাম ঝরনার একদম ওপরে। ওপরের অংশটা আসলেই অসাধারণ তিন দিক থেকে ছোট তিনটা ঝরনার পানি বেয়ে পড়ছে সেই পানিগুলো আবার নিচে বড় ঝরনা হয়ে বেয়ে বেয়ে পড়ছে সত্যি অসাধারণ। সময়ের কিছুটা স্বল্পতার কারণে দ্রুত ঝরনার পানিতে গোসল সেরে কিছু স্মৃতিমাখা ছবি নিয়ে আরেকটা ঝরনা সহস্র ধারার উদ্দেশে রওনা দিলাম।

মাত্র একটা ঝরনা ধারা তাকে কেন সহস্র ঝরনা ধারা বলে সেটাও আমার কাছে রহস্য। স্থানীয়দের ভাষায় এ ঝরনার নাম বড় ঝরনা। সুপ্তধারার মতো বড় ঝরনাকে কেন ছোট ঝরনা বলে আর সহস্র ধারার মতো ছোট ঝরনাকে কেন বড় ঝরনা বলে তা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেও জানতে পারলাম না। ঝরনার সঙ্গে নামের এ বৈপরিত্য থাকার পেছনে আসলেই কি রহস্য আছে? আমার ভেতর এ প্রশ্নটা আজও কাজ করে।

যাই হোক কঠিন পথ পেরিয়ে এ ঝরনায়ও অনেকটা সময় প্রকৃতি আর মানুষের আনন্দ দেখলাম। এরপর ইকো পার্কের ভেতরেই একটা ওয়াচ টাওয়ার আছে সেখান থেকে মোটামুটি অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। সেখান থেকে প্রকৃতি দেখতে এতই যে চমৎকার, বলে বোঝানো অসম্ভব। এক কথায় অপূর্ব।

যাই হোক দুটি ঝরনা দেখার পর দুপুরের খাবার খেয়ে রওনা দিলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির দেখার জন্য। উল্লেখ্য, ইকো পার্কের ভেতর দিয়ে একটা রাস্তা আছে, সেটা দিয়ে অল্প সময়ে মন্দিরে যাওয়া যায়। কিন্তু সেই রাস্তায় নাকি প্রায় ডাকাতি হয় তাই কর্তৃপক্ষ সেই রাস্তা দিয়ে যেতে দেয় না, তবে বড় দল হলে কোনো সমস্যা নেই।

আমরা ইকো পার্ক দিয়ে না গিয়ে ইকো পার্ক থেকে বের হয়ে গেলাম। এবার মূল রাস্তা দিয়ে চন্দ্রনাথের দিকে রওনা দিলাম। যদি কেউ না চেনেন তবে স্থানীয়দের কাছে জিজ্ঞেস করলে দেখিয়ে দেবে।

যাই হোক পাহাড়ের সামনে এস পৌঁছালাম। যখন পাহাড়ের সামনে দাঁড়ালাম তখন আমাদের চারজনের ভেতরে দুজন বললো, এত বড় পাহাড়ে উঠা অসম্ভব! পরে আমি আর আরেকজন তাদের নিচে রেখে পাহাড় বেয়ে উঠা শুরু করলাম। হাঁপাতে হাঁপাতে অবশেষে চন্দ্রনাথ মন্দিরে পৌঁছলাম। সে যে কি আনন্দ। এত পরিশ্রমের পর যখন চন্দ্রনাথ মন্দির দেখতে পেলাম তখন তো ভীষণ আনন্দ লাগবেই।

চন্দ্রনাথ মন্দির থেকে চারদিকটা সত্যি অসাধারণ। দূরে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে আর চারদিকে যেন পাহাড়ের ঢেউ খেলা করছে।

Scroll to Top