বাংলার আয়না

১ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৮ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২১ শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

Ad

আজ পহেলা অগ্রহায়ণ, হেমন্ত, নবান্ন উৎসব

ইদ্রিস মাদ্রাজী
দিগন্ত জুড়ে বাংলার মাঠ আজ হলুদে-সবুজে একাকার। নয়নাভিরাম অপরূপ প্রকৃতি। সোনালি ধানের প্রাচুর্য। কৃষকের মন-প্রাণ ভাসছে আনন্দধারায় । বাড়ির উঠোনে উঠোন ভরে উঠছে ধানের গোলায়, ছড়িয়ে পড়ছে নতুন ধানের ম-ম গন্ধ। এসেছে অগ্রহায়ণ। হিম হিম হেমন্ত দিন, নবান্ন উৎসব । বাঙালির প্রধান খাবার, আমন ধান কাটার মাহেন্দ্র সময়।

কৃষিভিত্তিক সভ্যতার পুরোভাগে থাকা এই নবান্ন উৎসব অনাদিকাল হতে বাঙালির জীবন অধিকার করে আছে। নতুন ধান থেকে পাওয়া চালে হয় নবান্ন উৎসব। হিন্দু লোককথায় এদিনকে বলা হয়ে থাকে বাৎসরিক মাঙ্গলিক দিন। নতুন আমন চালের ভাত বিবিধ ব্যঞ্জনে অন্নাহার, পিঠেপুলির উৎসবের আনন্দে মুখর হয় জনপদ। মেয়েকে নাইয়র আনা হয় বাপের বাড়ি। নতুন ধানের ভাত মুখে দেয়ার আগে কোথাও কোথাও দোয়া, মসজিদে শিন্নি দেয়ার রেওয়াজ আছে। হিন্দু কৃষকের ঘরে পূজার আয়োজন চলে ধুমধামে। হিন্দুদের বারো মাসের তেরো পার্বণের বড় পার্বণ এই নবান্ন। একে ঘিরে তাদের বারো পূজার প্রচলন আছে। তারা নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক প্রভৃতি প্রাণীকে উৎসর্গ করে এবং আত্মীয়স্বজনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন গুড়সহ নবান্ন গ্রহণ করে। হিন্দু লোকবিশ্বাসে কাকের মাধ্যমে ঐ খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছায়। এই নৈবেদ্যকে বলে ‘কাকবলী’।

রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বসছে গ্রামীণ মেলা। এ মেলা হয়ে উঠবে মানুষের মিলনমেলায়। হেমন্তে কৃষক ‘রাশি রাশি ভারা ভারা সোনার ধান’ কেটে আনে ঘরে। কুয়াশায় মোড়া প্রকৃতির ভেতর ধান ভাঙার গান ভেসে বেড়ায় হেমন্তের বাতাসে, ঢেঁকির তালে মুখর হয় বাড়ির আঙিনা। তবে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন আর ঢেঁকির মুখরতা নেই। তারপরও সেই আনন্দঘন পরিবেশ একবারে ম্লান হয়নি। এদিন নতুন চালের পিঠার জন্য শুরু করেন খেজুরের রস সংগ্রহ। নতুন রস আর নতুন চালের পিঠা হয়ে আছে বাঙালি সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

জাতীয় নবান্নোত্সব উদযাপন পর্ষদ প্রতি বছর পহেলা অগ্রহায়ণ তারিখে নবান্ন উৎসব উদযাপন করে। আজ ১ অগ্রহায়ণ ঢাকার শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে নবান্ন উৎসব ১৪২৯-এর আয়োজন করা হয়েছে।

Scroll to Top