ইদ্রিস মাদ্রাজী
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মধুমতি নদী বিধৌত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান।
বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। সাফল্য গাঁথা এই কর্মময় জীবন কুসমাস্তীর্ণ ছিল না, ছিল কণ্টকাপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস থেকেছেন গৃহবন্দি। সামরিক শাসনামলেও বেশ কয়েকবার কারানির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বারবার জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ২০ বার তাকে হত্যার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, চরম সংকটে দলের হাল ধরেছিলেন শেখ হাসিনা। সেখান থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা আর দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তার নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। দূরদর্শী ভূমিকায় করোনা সংকট সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছে বাংলাদেশ। করোনাসহ সব দুর্যোগেও সচল রেখেছেন দেশের অগ্রযাত্রা। তার সময়োপযোগী নেতৃত্ব দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্ব দরবারেও। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটেও আগেই নিয়েছেন নানা পদক্ষেপ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদসহ চতুর্থবারের মতো সরকার পরিচালনা করছে। ২০০৯ থেকে গত এক যুগে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় যুক্ত হয়েছে অজস্র সাফল্য-স্মারক।
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্রবক্ষে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন, ছিটমহল বিনিময়, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয় হয়েছে।
বাংলাদেশ সাবমেরিন যুগে প্রবেশ করেছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতুর পাশাপাশি, মহাসড়কগুলো ফোরলেনে উন্নীত হয়েছে। এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন হয়েছে। মাথাপিছু আয় ২৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার হ্রাস, মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৪ বছর ৪ মাসে উন্নীত হয়েছে। যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশে উন্নীত করেছেন। বছরের প্রথম দিন প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত ও স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারী নীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফাইভ-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জ্ঞানভিত্তিক উন্নত রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বির্নিমাণে শেখ হাসিনা ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা তথা রূপকল্প-২০৪১’ ঘোষণা করেছেন। বাস্তবায়নে কাজও করে যাচ্ছে তার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। এছাড়াও আগামী প্রজন্মের জন্য ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে।
সফল রাষ্ট্রনায়ক ও সংকটে যোগ্য নেতৃত্বে শেখ হাসিনার অবদান জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ইতোমধ্যে তিনি শান্তি, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য ভূষিত হয়েছেন অসংখ্য মর্যাদাপূর্ণ পদক, পুরস্কার ও স্বীকৃতিতে। নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ় মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলি তাকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে।
তাই দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ’বাংলার আয়না’র পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি রইলো ট্রিলিয়ন, ট্রিলিয়ন লাল গোলাপ শুভেচ্ছা, শুভ কামনা, দীর্ঘ হোক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন। বেঁচে থাকুক তিনি বাংলাদেশ তথা বাঙ্গালী জাতির আশার বাতিঘর হয়ে অনাদিকাল, অনন্তকাল।